
গুটিবসন্ত পৃথিবীতে ঠিক কতদিন রাজত্ব করেছে তার কোন সঠিক ধারণা নাই। বাইবেলে গুটিবসন্তের কথা আছে। মিশরের মমির শরীরেও গুটিবসন্তের দাগ পাওয়া গেছে। পারস্যের চিকিৎসক ইবনে সিনাও তার বইয়ে গুটিবসন্তকে চিহ্নিত করে গেছেন।
ভারতীয় উপমহাদেশে গুটিবসন্তকে ওলা ওঠা বা ওলা বিবির আগমণ বলা হতো। এতে গ্রামের পর গ্রাম জনশূণ্য হয়ে যেত। এই রোগে হাজার হাজার লোক মৃত্যুবরণ করতো । লাশ সৎকারের জন্যও কোন লোক পাওয়া যেত না। নিকটাত্মীয়রা গুটিবসন্তের রোগীকে পানিতে ভাসিয়ে দিতেন।
এডোয়ার্ড জেনার ১৭৯৬ খ্রিষ্টাব্দে গুটিবসন্তের টিকা আবিস্কার করেন। এর পরেও প্রায় ৫০ কোটি মানুষ গুটিবসন্তে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। কারণ ওই টিকা ছিলো নিম্নমানের। এছাড়া সমন্মিত কোন কার্যক্রমের মাধ্যমে এটি নির্মূলের চেষ্টা হয়নি।
পরবর্তী একশবছর ধরে এডোয়ার্ড জেনারের তৈরি গুটিবসন্তের টিকা নিয়ে ব্যাপক গবেষণা করেন বিজ্ঞানীরা এবং সাফল্যও পান।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত হয় জাতিসংঘ। এতে সকল জাতি একত্রে বসে সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্লাটফর্ম তৈরী হয়। যুদ্ধ ও রাজনৈতিক বিষয়গুলো সমাধানের পাশাপাশি বৈশ্বিক স্বাস্থ্য ও রোগ নিরাময়ে বিভিন্ন কর্মসূচী হাতে নেয় জাতিসংঘ।
জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে ১৯৫০ সাল থেকে গুটিবসন্তকে পৃথিবী থেকে উৎখাত করার দু:সাহসিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে এডোয়ার্ড জেনারের আবিস্কৃত টিকার ব্যপক আধুনিকায়ন ও উৎপাদন করা হয় এবং বিভিন্ন দেশে টীকাদান কর্মসূচি হিসেবে গৃহিত করা হয়।
সেই ধারায় বিশ্বস্বাস্থ্যসংস্থা ১৯৮০ সালে পৃথিবীকে গুটিবসন্তমুক্ত ঘোষণা করেন বিজ্ঞানীরা । এরপর প্রাকৃতিকভাবে গুটিবসন্ত আক্রান্ত আর কোন রোগী পাওয়া যায় নি।