
বাংলাদেশের এখন বন্যায় প্লাবিত রয়েছে ১৭টি জেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল। এসব অঞ্চলের কৃষকেরা গবাদি পশু নিয়ে পড়েছেন চরম বিপাকে। বিশেষ করে কোরবানিতে বিক্রি করার জন্য সারা বছর ধরে যারা পশু পালন করেছেন তারা পড়েছেন মহাবিপাকে। অনেকে পানির কারণে গরু হাটেও নিতে পারছেন না। রাখার জায়গা না পেয়ে কেউ কেউ কম দামেই পশু বিক্রি করে দিচ্ছেন। ফলে সারা বছর শ্রমে-ঘামে তৈরি কোরবানির পশু ভালো দামে বিক্রির স্বপ্ন বন্যায় ভেসে যাচ্ছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, ভারতের মেঘালয়, চেরাপুঞ্জি, আসাম, ত্রিপুরা, চীন ও নেপালের পানি এসে বাংলাদেশে এই বন্যার সৃষ্টি করেছে। তিনি জানান, এরই মধ্যে দেশের ১৭টি জেলা বন্যায় প্লাবিত এবং ১৪ লাখ ৫৭ হাজার ৮২৭ জন মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যা আরও বেশ কয়েকটি জেলায় বিস্তৃত হয়ে আরও সপ্তাহ দুয়েক স্থায়ী হতে পারে বলেও তিনি সতর্ক করেছেন।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, নতুন করে ২৩ জেলায় বন্যা বিস্তৃতি লাভ করবে এবং তা অগাস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত স্থায়ী হবে।
জুন থেকে পাহাড়ি ঢলে কয়েকটি জেলার নদ-নদী বিধৌত নিন্মাঞ্চল প্লাবিত হলেও তখন তা স্থায়ী হয়নি। কিন্তু বর্তমান বন্যায় অনেক এলাকার রাস্তাঘাট পর্যন্ত ডুবে গেছে। কোথাও কোথাও রাস্তা ভেঙে মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। বাড়িতে পানি ওঠার ফলে নিজেদেরই থাকার উপায় নেই, এর ওপর গবাদি পশু নিয়ে পড়েছেন চরম বেকায়দায়। স্কুল, উঁচু রাস্তা বা বাঁধের ওপর অনেকে টিনের ছাপড়া তৈরি করে আশ্রয় নিয়েছেন। এর ওপর দুর্ভোগ বাড়িয়েছে প্রায় প্রতিদিনের মুষলধারার বৃষ্টি। অনেকে পলিথিন টাঙিয়ে কোনো রকম পশুগুলোকে রক্ষা করছেন। কোরবানিতে পশু বিক্রি করতে পারবেন কিনা, এর মধ্যে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হবে কিনা এসব ভেবে বন্যা কবলিত এলাকার কৃষকরা চরম অনিশ্চয়তায় রয়েছেন।
বগুড়া জেলার ধুনট উপজেলার গোসাইবাড়ি ইউনিয়নের কৃষক আমজাদ বলেন, ধুনট ও সোনাতলা উপজেলার ভান্ডারবাড়ি, গোসাইবাড়ি, শিমুলবাড়ি, চন্দনবাইশা, জোড়শিমুলসহ বিভিন্ন এলাকার অনেক মানুষ বন্যা কবলিত হয়ে ওয়াপদা বাঁধের ওপর আশ্রয় নিয়েছেন।
তিনি বলেন, ছোট একটি গুদামে গরু-ছাগল নিয়ে এক সঙ্গে বসবাস করছি। জানিনা এ দুঃখ কবে ঘুচবে। সারাবছর ধরে একটা গরু পালন করেছি সেটাও বিক্রি করতে পারব কিনা তা নিয়েও চিন্তায় আছি।